Posts

ইচিং মিচিং

  চারদিকের এই ধানাই-পানাই বলছে যাহার যা ইচ্ছে তাই । মামা কাকা দাদা পিশে আলু কালু ময়দা মিশে কাগের ঠ্যাংএ বগের ফিতে কোথায় কাহার দাদুর পিতে ! কার রাগে কে খায়নি যে ভাত আদ্যিকালের সে বদ্যির বাত । তুই কি চোরা ? না মুই কী চোর ! কে বা আদিম , কারা ভুঁইফোড় । খিঁচড়ি পোলাও গোস্ত কাবাব রাজা উজির চাকর নবাব ; স্বর্গ-মর্ত্য পাতাল কিবা উচ্ছ মুচ্ছ উটের গ্রীবা । ভাবছো যদি এ উৎপটাং ! তবেই হবে ঠিক চিৎপটাং । কেম্‌নে মানুষ খাবে খাবি সে-কলের এই চাবিকাঠি । ওহে বাবা চাঁদুমনি এ শাস্তর আগে পড়োনি । নাচো নাচো , নাচ্‌ মেরি জান্ ‌ থামলে আছে এ চাবুকখান। ভাবা নিষেধ পোড়া দেশে কলুর বলদ ঘানি পেষে। কষ্ট একটু হলোই না হয় কিন্তু বারণ বিষণ্নতায় । ইচিং মিচিং লিখে দিলুম সত্যি ভেবোনাকো হালুম!

সুরেশ্বর

  সুরেশ্বর মালিক উঁচু মগডালেতে বসেন সে ডাল ভীষণ পল্‌কা এবং সরু, চান না তিনি সে দিকে কেউ ঘেঁষুক। রাখেন অনেক শিং বাগানো গরু সবাই তারা গোড়ায় জোগায় সার। করাত-কলের মালিক তাঁহার চেনা অন্য গাছের খবর তারে দেন। নিজের গাছের সুরক্ষা তাঁর কেনা। স্বপ্ন দেখেন উজাড় হ’লে বন একা কেবল পা দোলাবেন বসে পোষ্যগুলো ঘুরবে ঘাসে ঘাসে দুধ ননী ঘি-র নেই তো ভাগীদার। প্রতিদ্বন্দ্বী নেই তো ধরা ধামে কী আনন্দ একাই পাটেশ্বর! কাঠ-মালিকের ফন্দি আছে নানা, সবার শেষে কাটবে যে গাছখানা তাকেই কষে বানায় সুরেশ্বর।

বিম্বিসারের কারাগার

দম্ভের ছটা  মিলিয়ে গিয়েছে দাপটের কণামাত্রও নেই। দীর্ঘ প্রাচীর সুরক্ষা ঘেরা শানানো শস্ত্র রুদ্রতেজা। হীরা হাসি সোনা  মুক্তা লাস্য বহুমূল্যের যতকিছু কেনা ধূসর হয়েছে সুখের খাজানা।  শুধু জেগে আছে হৃদয়ে রথের দাগ আর যা কিছু দুঃখমূল্যে কেনা।   

আষাঢ় শ্রাবণ

এভাবে কেউ নিজের বুকের চাঁদমারিতে আপন হাতে তির মারে! নিজের নীলা পদ্মলোচন  অকাল পূজায় অর্ঘ্য ধরে! নিজের বাগান ছিঁড়ে ছিঁড়ে আত্মবলির মালা পরে! এভাবে কেউ নিজের আকাশ কান্না ভারে কাজল করে, নিজের সাগর বক্ষ জুড়ে তুফান তোলে! এভাবে কেউ  নিজের চরে নিজের ঘরে নিজের অশ্রু নিজেই মাপে নিজেই ভাসায় নিজেই ভাসে নিজের ভেলা নিজেই ডোবায়। আপন সুরে আপনি কেঁদে এভাবে কেউ কাউকে কাঁদায়! এভাবে কে আত্মসজল ছন্নছাড়া আষাঢ় শ্রাবণ ভাদর ছাড়া?   

ঝরনা

চলতে চলতে চলতে যদি দেখে কিছু নেই আর ঝাঁপিয়ে প'ড়ে তীব্র নির্দ্বিধায় সব থেকে ভালো এক ঝরনা উপহার দেয় সাধারণ নদী। আমরা শব্দ শুনি গুঁড়ো জল মেখে বিস্মিত__ আহা ! কখনো ভাবিনি একটা প্রপাত মানে পথের শেষ নিরুপায় কর্তব্যবিমূঢ় দিশাহীন চোখ বুঝে সর্বনাশে সমর্পণ __ লাফ পিছুটানহীন, হবে হোক যা-হয়-যা !!!

অমল সদনের পিন কোড

জিভের উপরে জ্বলন্ত দেশলাই কাঠি নিভিয়ে ফেলতে পারি এক নিমেষেই; কিন্তু   খন্ডহর ছেড়ে তো আসতে পারবে না — পুরানো দেওয়ালের নোনা ইঁটের গুঁড়োয় চুলে মুখে আঁচলে নাছোড় পুরু আস্তরণ, জীর্ণ কাঠামোর পাঁজরে প্রবল হাঁপানি পা তুললেই ডেকে ওঠেন প্রবীণ তক্ষক। মুঠোয় ধরা আছে শতাব্দী-জীর্ণ কর্তৃ-চিহ্ন অঝোরে আকাশ ভাঙছে— তর্জনগর্জন, কোনও নৌকা বাঁধা নেই কোনও ঘাটে। মহাপুরুষের নামে সেতু বানানোই সার চুলের মুঠি ধরে আছে পুরাতন দুঃশাসন। সহস্র জোনাকি জ্বলছে খড়ের স্তূপে দাহ্য চক্‌মকিও চিনি নিতান্ত গোপনের— কিন্তু তুমি তো আসতে পারবে না! এই শহরে এমন কেউ কোথাও নেই যে তোমাকে এঁকে দেবে সজল পথ আর, পিন কোড দেবে অমল সদনের।

তারাই শুধু জানে

প্রতিটা চড়াই আসলে নিজস্ব যুদ্ধ— হ্রদের জলে আঙুল ডুবিয়ে শুধু ‘আঃ’ বলার জন্যই হাজার ফুট উপরে ওঠা।  তার বেশি সার্থকতা আছে কিনা ফেলে আসা পদচ্ছাপ, হাতের লাঠি ও দু-একটা হলুদ ক্যাকটাস ফুল ছাড়া সে ভাবে কেউই জানে না। দূরান্তে ঝুঁকে থাকা সাদা হিমবাহগুলি  কারো কারো স্বপ্নে জাগে অহোরাত— ঘুম থেকে উ’ঠে এসে সটান কবিতার কাছে নতজানু হয়ে ব’সে জলাঞ্জলি দেওয়া সমস্ত সাজানো সঞ্চয়... এসব সকলে পারে না।  শৃঙ্গে পতাকা ওড়ানো মানে দুই হাত আকাশে তুলে ঈশ্বরীয় উল্লাস— এর বেশি আর কিছু নয়।  যারা জানে তারাই শুধু জানে সমস্ত পর্বত আরোহীর কাছে  জয়ধ্বনি অর্থহীন, মূর্ছিত পরাজয়।

আমার আপেল বাগান দেখার ইচ্ছে

পাঁচ ছ’জন পাহাড়ি ছোকরা  চুলে হাত বোলাতে বোলাতে  পাথরে পা রেখে ঝোরা পেরিয়ে আধো অন্ধকারে নদীর শব্দমাখা আপেল বাগানে ছায়া মানুষের মতো ঢুকে গেল অনায়াসে... মাথা তুললেই বরফ আর বরফ... প্রেমের শৈত্য ছিঁড়ে ছুটে এসেছে দুর্বার জল যে ফুটন্ত আপেল ফুলের কাছে, তার সুগন্ধ আমিও নেব বলে জুতো খুলে স্থানু দাঁড়িয়ে আছি ঝোরার এপারে; সময়ের আগে কবিতা শেষ না করতে পারার মতো অসহায়— চোখের সামনে ঝ’রে যাচ্ছে পাপড়ি রেণু মেখে আর কী ফিরে আসবে ছেলেগুলো! আমার আপেলজন্ম দেখার ইচ্ছে ওদের সুখী করুক। আমার স্বপ্নের ক্যানভাসে ওরা হারিয়ে ফেলুক পথ।

অসুর

আলপনায় ভরিয়ে দেব ভুবনজোড়ের বাসন্তী পাহাড়, শীর্ষ থেকে পাদমূল-ছুঁয়ে-থাকা ঝিলমিল নদীটির তীর। গান গাইতে কেন শেখালে না শরৎ-এর সবুজ, হেমন্তের শিশির, নবান্নের গন্ধলাগা ম্লান ঝরা ফুল ? অন্তিম ঋতুতে আর কার কাছে কৃতাঞ্জলি পেতে নেব তৃষ্ণার জল! অস্নাত আমের সোনালী মঞ্জরি- কীকরে ভেজাব তাকে আনমনে, শিশিরের পূর্ণিমা নিশীথে! এত যে আবিরের গুঁড়ো ইতস্তত এতে কোনও সুর নেই, লয়; কেউ এতে ডোবেনি গভীরে দুহাতের করতল পুড়েছে তালহীন নেশার নিতান্ত উদ্দামে। কেউ এতে ভেজেনি আ-শির, গানেপ্রাণেসুরেমনে আমূল বিদ্ধ করেনি কাউকে অতলে। শুধু দুচোখে পুড়েছে দৃষ্টি মাত্রাহীন নিমিত্তের উল্লাসে। রাঙিয়ে দিয়েছি সব উজ্জ্বল ফাগে নিজেও ভিজেছি খুব তরল ফেনায়- কেউই আন্তরিক দুঃখিত নয় কাঁদে একা ছিঁড়ে যাওয়া সরোদের তার। অকস্মাৎ অন্তরায় থেমে গেছে ধারা আভোগে আসেনি জোয়ার। কেন আমাতে গান দিলে না উদারামুদারাতারায় অচিন উড়াল-

নির্মম নূপুর

গ'লে যাচ্ছে তিরন্দাজী শিকারী শরীর ভারাট অঞ্জলি নিয়ে দূরে হাইড্রনজিয়া। স্বপ্নান্ধ চোখের পাতা খোলা র'য়ে গেছে আকাশের নীল ছায়া, মেঘ ও কুয়াশা; উপরের ঠোঁটে এসে প্রজাপতি বসে পাইন বনের গান সর্বক্ষণ ঘেরে..... নিষাদ মিলিয়ে যাচ্ছে একাকী নির্জনে তাকে গ্রাস করে শান্ত সকাল দুপুর.... পাশে বয়ে চলা নদী উজলা উদাস কানে তার ঢেলে দেয় নির্মম নূপুর।

নিহত নিষাদ

চঞ্চলা নদীর তীরে নিহত নিষাদ হাতের ধনুক খসা, ভেঙেছে তূণীর ছাড়ানো ছিটানো শর তখনো সতেজ তিনটে ধনেশ আসে সকাল বিকাল...... হয়তো আবার কোনো নতুন নাবিক কেউ দিগন্তের খোঁজে এসে যাবে দীর্ঘশ্বাস মেলানোর আগে !

অসহায়

সেই নদী ক্ষীণকায় তবু ক্ষুরধার, সাবধানে হাত রেখো পা অথবা আচমন.... কী কী কাড়বে হেসে ঠিক নেই তার ! তখন দিনের শেষে ফিরতে ডাকছে পাইন বনের হাতছানি পাহাড় চূড়োর আলো বন মোরগের ডাক.... নিজেকে চিনবে হায় মাতাল দৃষ্টিহারানো নিরুপায় তুমি এক ফাঁদে পড়া ব্যাধ!!

অতল

একদিন সেই ক্যানিয়নে যতদূর পারি নামব ভুলে যাব উত্থানের ইচ্ছে--- ক্ষুরক্ষীণকায় নদীর সুর সাতটি কুঁড়ে নিয়ে গাঁও উদূখলের আঁকাড়া চাল লাইপাতার উদাস ঘ্রাণ--- বৃষ্টিকুয়াশামেঘ কানে জিভ দিয়ে ব'লে যাবে - এর নীচে আর  নীচে নেই কোনও .......

কী ভেবেছিলে ?

থেতলে মেরে পুড়িয়ে দিয়ে করেছ একী সর্বনাশ ! সকলে তাকে জাগিয়ে মনে তীব্রতর দুঃসাহসে  মশাল জ্বালে প্রাণের পণে। ভেবেছিলে কী যায় বা আসে দুঃশাসনী মায়ার ফাঁসে ফুঁ দিয়ে ছাই উড়িয়ে দিয়ে সাজিয়ে রাখবে পৌষমাস ?

নির্ঘুম রাত

                তুমি কেন ঘুমাবে? মাতাল দু'ঠোঁটের             সংলাপে প্রলাপ                  এপারে দূরভাষে আমার সমস্ত                আঁধার গ'লে যাবে                    তারার উল্লাসে

পলাতক

  যত ধরে রাখো দুই হাত জুড়ে গ্রীষ্ম বর্ষা শীত বসন্তে---- উড়ে যাওয়ার ঋতু তার আছে। ঢেউয়ে ঢেউয়ে ডাক দেয় খুব পাহাড়ের চূড়ো-ঘেরা মেঘ-পথে। পুরানো আভাস ফিরে ফিরে আসে হ্রদের কিনার দিয়ে ক্রমে ক্রমে ....... যত অনিমেষ হোক তীব্র সে নখের আঁচড়, ফুটে থাকা ফুলে লাল অভিমান। উড়ন্ত তুলো উষ্ণতার টানে পরিযায়ী চোখে অমোঘ লহর তোলো অবিরাম। নাতিশীত চরে মুছে যায় স্মৃতি ....... বাধ্যতা তাকে ডাকে কোলাহলে।

শহীদতীর্থ বরাক

 https://boikathapatrika.in/boikotha/issue-01-boishakh-1429/31-ekti-daybawddho-sawmajchawrchar-nidawrshon-tanmay-bir?fbclid=IwAR3Xoah-wQFuomn6Eb7_Ft6RM3jxfAHU7rs_4Kwxmb_FTHhnwfSD0TnABlQ

তার কাছে

কিছু জঙ্গল, অতর্কিত শ্বাপদ নিরাপদ রক্তে রাখে থাবা। অনুশোচনাহীন ফিরে যাওয়ার চেয়ে জিভে কিছু হলাহল, সমুদ্রে উল্কা আর সজারুর কাঁটা নিয়ে পায়ে ষাঁড়াষাঁড়ি বানে ভেসে যেতে চায় অহল্যা চরাচর। জ্বরের কাঁপনে, জ্যোৎস্নার জলে তারার ছাইয়ের মতো সম্বলহীন চলে যাওয়া ভালো- কম্বল বিছানা বালিশ ছিঁড়ে আলেয়া বলয়ের বিস্ময়ে। কিছুই চিনিনা যার ইঙ্গিতে জেনেছি কিছু সুস্বাদু নিঃশ্বাসে।

অবসাদ

আলোর মতন ফুটেছে বাগান-বিলাস অপরাজিতার গায়ে এসে ব’সে বিকেলের আলো কাঞ্চনের থোকা থেকে পাপড়ি ঝ’রে... নীচে কিছু পাতাবাহার, কামিনীর সবুজ। মাটিতে তিনটে অভিমানী শুকনো পাতা... সন্ধ্যালগ্নের সানাই বাজে দূরে। কোথাও যাব না; চুপ করে শুয়ে থাকব নদীহীন দেশে নদীর স্রোতের স্বপ্নে কুয়াশার চাদর জড়িয়ে। না আমার কোনও রাগ নেই, দ্বেষ নেই পাপ নেই, শোক নেই মরে পড়ে থাকা জোনাকির মতো...

রাক্ষস খোক্কস ছোটোলোক

আসলে একটা মানুষ না ৷ একটা প্রাণী একটা গাছও হওয়ার সে যোগ্য না ৷ বুকে শুয়ে একটা সনেট ; তবু তার মিল অমিল, অষ্টক  ষটক গুনছে জ্যান্ত গবেট ৷ প্রেমিক ভাবলে করবে শোক ! আসলে সে একটা গেঁয়ো রাক্ষস খোক্কস ছোটোলোক ৷