Posts

Showing posts from July, 2025

আষাঢ় শ্রাবণ

এভাবে কেউ নিজের বুকের চাঁদমারিতে আপন হাতে তির মারে! নিজের নীলা পদ্মলোচন  অকাল পূজায় অর্ঘ্য ধরে! নিজের বাগান ছিঁড়ে ছিঁড়ে আত্মবলির মালা পরে! এভাবে কেউ নিজের আকাশ কান্না ভারে কাজল করে, নিজের সাগর বক্ষ জুড়ে তুফান তোলে! এভাবে কেউ  নিজের চরে নিজের ঘরে নিজের অশ্রু নিজেই মাপে নিজেই ভাসায় নিজেই ভাসে নিজের ভেলা নিজেই ডোবায়। আপন সুরে আপনি কেঁদে এভাবে কেউ কাউকে কাঁদায়! এভাবে কে আত্মসজল ছন্নছাড়া আষাঢ় শ্রাবণ ভাদর ছাড়া?   

ঝরনা

চলতে চলতে চলতে যদি দেখে কিছু নেই আর ঝাঁপিয়ে প'ড়ে তীব্র নির্দ্বিধায় সব থেকে ভালো এক ঝরনা উপহার দেয় সাধারণ নদী। আমরা শব্দ শুনি গুঁড়ো জল মেখে বিস্মিত__ আহা ! কখনো ভাবিনি একটা প্রপাত মানে পথের শেষ নিরুপায় কর্তব্যবিমূঢ় দিশাহীন চোখ বুঝে সর্বনাশে সমর্পণ __ লাফ পিছুটানহীন, হবে হোক যা-হয়-যা !!!

অমল সদনের পিন কোড

জিভের উপরে জ্বলন্ত দেশলাই কাঠি নিভিয়ে ফেলতে পারি এক নিমেষেই; কিন্তু   খন্ডহর ছেড়ে তো আসতে পারবে না — পুরানো দেওয়ালের নোনা ইঁটের গুঁড়োয় চুলে মুখে আঁচলে নাছোড় পুরু আস্তরণ, জীর্ণ কাঠামোর পাঁজরে প্রবল হাঁপানি পা তুললেই ডেকে ওঠেন প্রবীণ তক্ষক। মুঠোয় ধরা আছে শতাব্দী-জীর্ণ কর্তৃ-চিহ্ন অঝোরে আকাশ ভাঙছে— তর্জনগর্জন, কোনও নৌকা বাঁধা নেই কোনও ঘাটে। মহাপুরুষের নামে সেতু বানানোই সার চুলের মুঠি ধরে আছে পুরাতন দুঃশাসন। সহস্র জোনাকি জ্বলছে খড়ের স্তূপে দাহ্য চক্‌মকিও চিনি নিতান্ত গোপনের— কিন্তু তুমি তো আসতে পারবে না! এই শহরে এমন কেউ কোথাও নেই যে তোমাকে এঁকে দেবে সজল পথ আর, পিন কোড দেবে অমল সদনের।

তারাই শুধু জানে

প্রতিটা চড়াই আসলে নিজস্ব যুদ্ধ— হ্রদের জলে আঙুল ডুবিয়ে শুধু ‘আঃ’ বলার জন্যই হাজার ফুট উপরে ওঠা।  তার বেশি সার্থকতা আছে কিনা ফেলে আসা পদচ্ছাপ, হাতের লাঠি ও দু-একটা হলুদ ক্যাকটাস ফুল ছাড়া সে ভাবে কেউই জানে না। দূরান্তে ঝুঁকে থাকা সাদা হিমবাহগুলি  কারো কারো স্বপ্নে জাগে অহোরাত— ঘুম থেকে উ’ঠে এসে সটান কবিতার কাছে নতজানু হয়ে ব’সে জলাঞ্জলি দেওয়া সমস্ত সাজানো সঞ্চয়... এসব সকলে পারে না।  শৃঙ্গে পতাকা ওড়ানো মানে দুই হাত আকাশে তুলে ঈশ্বরীয় উল্লাস— এর বেশি আর কিছু নয়।  যারা জানে তারাই শুধু জানে সমস্ত পর্বত আরোহীর কাছে  জয়ধ্বনি অর্থহীন, মূর্ছিত পরাজয়।

আমার আপেল বাগান দেখার ইচ্ছে

পাঁচ ছ’জন পাহাড়ি ছোকরা  চুলে হাত বোলাতে বোলাতে  পাথরে পা রেখে ঝোরা পেরিয়ে আধো অন্ধকারে নদীর শব্দমাখা আপেল বাগানে ছায়া মানুষের মতো ঢুকে গেল অনায়াসে... মাথা তুললেই বরফ আর বরফ... প্রেমের শৈত্য ছিঁড়ে ছুটে এসেছে দুর্বার জল যে ফুটন্ত আপেল ফুলের কাছে, তার সুগন্ধ আমিও নেব বলে জুতো খুলে স্থানু দাঁড়িয়ে আছি ঝোরার এপারে; সময়ের আগে কবিতা শেষ না করতে পারার মতো অসহায়— চোখের সামনে ঝ’রে যাচ্ছে পাপড়ি রেণু মেখে আর কী ফিরে আসবে ছেলেগুলো! আমার আপেলজন্ম দেখার ইচ্ছে ওদের সুখী করুক। আমার স্বপ্নের ক্যানভাসে ওরা হারিয়ে ফেলুক পথ।