চলাই  অন­ন্ত

তন্ময় বীর

 

 

আর-তো ফিরে যেতে পারবো না ­

                 হেরে যেতেও প্রচণ্ড দ্বিধা

                   মরে যেতে আপত্তি প্রচুর

 

অন্ত্যমিল দিতে দিতে দিতে

    পদ্যকোকিলেরা অল্পরক্ত

               পাঁজরে শঙ্কা, সাবধানী সুর।

 

রুদ্রজলে কে নৌকা ভাসাবে ?

               সকলে গুড় ত্রিপল চায়

               লাইনে ক্যানেস্তারা দাঁড়ায়!

 

 

অভিজ্ঞ পূর্বজ, পিতামাতামহ,

তোমাদের অনুমিত মারি পৃথ্বী   

স্বপ্নের সন্ততিরা মিলিয়ে দেখছি,

কত ঠিক ছিল নক্ষত্র-নির্দেশ!

সদাগরি বহরের পালে লাগে

হাহাকারের অনুকূল বাতাস

সুয়োরানীদের সাধের সাতনরি,  

জ্যোৎস্নার সুতোয় বোনানো মখমল

সোনার ডিমের মতো শুধু লাভ

ডোবা কিস্তি ভেসে ওঠে রাজ-বরে

বিবিধ বিমায় সজ্জিত ঝলমল

   

 

মান্দাস অগণ্য ভাসে                  ডোবে দীর্ঘশ্বাস

চম্পা নগরীর পচা               নিরুপায় লাশ

 

 

 

 

 

 

              স্বার্থে স্বার্থে আপসের বেঁধেছে সংঘাত;

তাই শূন্য সুনির্মল আত্মার উল্লাস

অবিশ্বাসী চোখে জ্বলে ঈর্ষার মত

চক্রব্যূহ সপ্তরথী মিলে ঘিরে ঘিরে

নিজেদের রক্ত চেটে নিজেরাই খায়     

যেন তাতে অন্য কারো তৃষ্ণা না মেটায়!

কে আর হৃদয় পাশে নিবিড় দাঁড়াবে?

নোয়ার নৌকা আর কে সাহসে ভাসাবে?

পাত্র মিত্র সকলেই অম্লান সজ্জায়

ভিক্ষাপাত্র তুলে ধরি নির্লজ্জ সন্ধ্যায়!

 

আর-তো ফিরে যেতে পারি না

দ্বিধা আছে মরে ধুলো হতে,                      হেরে যেতে আপত্তি প্রচুর

প্রিয় দেবতারা ফিরে গেছে                  নিজেদের সুপ্তায়ণে, ঘরে;

কিম্ভুত কিমাকার কতক         উপদেবতার পদভারে

আস্থার স্তম্ভ মিনার ভাঙে                         ঝড়ে, ভূমিকম্পে চুর-চুর

হিরণ্যের সঙ্গে চুক্তি লেখে                 নরসিংহের নৃশংস ঊরু

নিরাপদ দ্বৈপায়ন তলে          নিঃশর্ত নীল নিঃশ্বাস মেলে,

শ্বাসরোধী লেলিহানে নিশ্চিহ্ন                  নির্বোধ বোকা বারণাবত

 

 

কে আর অকুতোভয় শিল্পী, সাজিয়ে শোনাবেন সুদীপ্ত

দৃপ্ত হাড়ের ঘন গম্ভীর বজ্রবাণী বীরবাহু মেঘনাদী?

শিলা ভাসানো নাম প্রকাশ্যে দিবালোকে উল্টো হয়ে ভাসে

গঙ্গায় যমুনায়; বালিরুপোলি চরে বেহায়া হাসে!

 

 

অজগর গ্রাসে ঢুকে যাচ্ছে                  সমস্ত সমাজ ও সভ্যতা                  সুদীর্ঘ কালের উপার্জন

তিলে তিলে জমানো সুস্থতা                  সমস্ত শিল্প সঙ্গীত চারু                  কারু, আস্থার উজ্জ্বল ডানা

চিরন্তন ইমারতগুলির           আভ্যন্তরীণ সুস্থ কাঠামো                  দ্রুত গলে যাচ্ছে হালকা তাপে,

অহম্মন্য বামনের দাপে            কোনোদিন কিছু ছিল না                   এসব তেমন স্থিত যেন!  

অন্বয়হীন ভাষণে, উদ্দেশ্য বিধেয়শূন্য বাক্যের তোড়ে, উদ্ভট রসে ধসিয়ে দিচ্ছে

          মহাকাব্যের নিষ্ঠ বিন্যাস

 

 

 

তাহলে বাস্তবিক কী কেউই কাউকে কখনো চিনিনি আমরা!

ধৃতরাষ্ট্রেরন্ধত্বে, জ্বরে ভরেছে আকুল মহারণ?

 

অ্যাকিলিস-গোড়ালি-সংবাদ দ্বিধাহীন সুচারু চিনেছে

প্রভুর সুচতুর দালাল ক্ষুধা, কাম, লোভের গোড়ায়

মূলধন বিছিয়ে দিতে রাজি অবনত কলির কানাই  

একলব্যের আনুগত্যের ’পরে গড়া ইন্দ্রপ্রস্থচ্ছটা  

প্রলয় বন্যার আকাশেতে উড়ে যায় পুষ্পকের হাসি

রে পড়া করুণা-দয়াচিঁড়ে চাটে দগ্ধ খাণ্ডববাসী

 

ফিরে যাব বলে-তো আসিনি,

                  ডুবে যাব বলে-তো ভাসিনি

তীর ঘেঁষে যেতে যেতে ক্রমে

           মোহনাকে সন্তর্পণে ডাকি,

মধ্যম পন্থার শ্বাস আর,

              সযতনে সামলানো সম্বল

অমাবস্যার ভরা কটালে

                 কাটে জনমান, ধান, জান

 

 

              জানি, এভাবে আসিনি পচে                মরে যেতে পুন পুন পুন

তবু...

নিরুপায় রক্তের ভেতরে                 জাগ্রত না-সেচতে-পারা ভয়

হায়...

এই মৃত্যুতো নয় প্রিয়ম্‌,                      ভিত্তিমূলে চক্রে চক্রে ক্ষয়

 

 

আশ্চর্য ফ্যানের গন্ধ মেখে জ্যান্ত শব হয়েছিল যারা,

মানচিত্র ছিঁড়ে চিবিয়ে খাবে বলেছিল যে হাঙুরে খিদে

      বেমালুম সব ভুলে যাব?

ফুল খেলবার সময় নয়, মাটিপানে তাকানোর দিন

      অবিবেচক ছিল বক্তারা!

আজও পাইনি আমাদের সেই সবচেয়ে সুন্দর দিনগুলোকে

      নিছক স্থূল এই বারতা?

ধর্মের পোশাকের আড়াল নেয় ধুরন্ধর শয়তানেরা

      অনর্থক অজ্ঞানীর কথা?

 

নতুন যুগের অমাত্যরা হাত তুলে বরাভয় দেয়

তোমরা সাক্ষাৎ নারায়ণী সেনা, পুনর্জীবন গ্যারান্টি বোনা,

হাসতে হাসতে নুইয়ে শুয়ে পড়ো; তোমাদের স্বপ্নের চন্দ্রমা

রুটি হয়ে ছড়িয়ে রয়েছে ঘাসে বনে রেলের লাইনে...

ওই দেখেছো দেবস্থানের আকাশ ছাড়ানো স্বর্ণচূড়া?

তার পাশেতেক্‌ক্‌রছে জাতির গর্বিত অস্ত্রশালা!

রাজা যদি কাপড় না পরে, প্রজার কীজন্য তেনা চাই?

নেতারা নাচুক ডালে ডালে, প্রজারা অন্ধ খঞ্জ কানাই

নিকাশ সাবানে হাত ধুয়ে, ঘুমাও জীবাণুশূন্য পেটে

ড্ডয়নের স্বপ্নেতে ভাসো ... ধিন্‌ তা ধিন্‌, তা-কেটে ধা

 

জাতির কোষ্ঠী লিখছে উপমহাদেশের উপমানবেরা :

অন্য দিকে যাওয়া নিষেধ             পরস্পরে দূরত্বে পৃথক                দাঁড়াও

লিঙ্গ গোত্র বর্ণ ধর্ম ভাষা,                     হা-অন্ন না-অন্ন ধনী; আর্য               ওঁরাও

ফিরে চাওয়া যেতে পারে শুধু                   জীর্ণ কালো পুরাতন স্থির               জরাও,  

হত্যা করা যেতে পারে সব              ব্যাবসা-অযোগ্য সব মন,                কথাও;                       

মুনাফাহীন স্বপ্নের চোখ                    অন্ধ করে বন্ধ করা হবে,               ব্যথাও   

খোয়াব যাহা সিংহাসনের,               তাহাই-তো দেখবে জনগণে -               নিশ্চিত,

কোনো অন্য কিছু ভাবতে মানা                দেখতে বারণ অপর দিকে              কশ্চিৎ

চোখ জিভ ইন্দ্রিয়সকল                  বাক্সে রাখো বন্ধ তালাচাবি                     দৃঢ়;

প্রশ্নহীন আনুগত্যে এসে               সাষ্টাঙ্গে শাসকের বন্দরে               ভেড়

 

তবুও ফিরে যেতে পারি না, রতে পারি না-তো অনর্থক

বেঁকে যেতে পারি না হঠাৎ, বাহারি সৌখীন কাকলিতে

কল্লোলিনীর বসন্তসখা মোম মেধাবীদের মত

 

হয়তো কেউ ফিরে যেতে চায় জলজঙ্গলের প্রান্ত গুহায়,

কেউ ভুয়ো ভালোবেসে হেসে, ফুলকেও মিথ্যেলাতে পারে

উল্টো স্বস্তিকা চড়ে ফানুস ওড়াতে পারে সন্ধ্যাবেলায়

 

কোন দিকে পথ পাতা জানি, কিছু চ্যুতি নিজেদের, মানি

সম্মোহিত তালুযন্ত্রে চোখ রেখে চোখের অসুখ মাপি

ডাইনো থেকে তুচ্ছাতিতু ঘাস সকলেরই সুসময় আসে।  

দর্পের দাপটে উড়ে যায় কালের মলিন কিছু ধুলো

প্রাজ্ঞ নাবিক শুধু দিনান্তে নিয়ে ফেরে নির্মেদ কঙ্কাল;

আগামীর প্রস্তুতিতে সাজে, বিশুদ্ধ সম্ভাবনা মশাল

 

একদিন শক্ত দেয়াল ভেঙে ধর্ম তার অতীত শোধরাবে

গোঁয়ার, ফিরে যেতে না চাওয়া দ্বান্দ্বিকেরাই প্রকৃত সন্ত

ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে স্বীকৃত হবে ­মানুষ বেশিটা বিজ্ঞান

যাদের পোড়ানো হয়েছিল, বিতাড়িত; অ্যানাক্সাগোরাস

সন্দেহেতে বিচ্ছিন্ন একাকী;ন্তরে সম্ভাবনা অসীম

সভ্যতার অতীতে ভবিষ্য লিখেছে অদম্য বল্মীকব্যাস

 

 

আমাদের ফেরা নেই আর,

হয়তো

কিছু আছে বক্রতা বাধ্যত!

পরিস্থিতিতে স্তব্ধতা ঈষৎ,

তবুও

অগ্রগামিতা অবধারিত  

 

শেষ-জিতে-যাওয়া বলে তো কিছু নেই     লা       ন্ত

 

 

 

 

 

_________________________________

Comments