মণিপুরি
গল্পের অনুবাদ, অনুবাদক (ইংরেজি থেকে) তন্ময় বীর
মরা সোঁতার মাছ
স্মৃতিকুমার সিন্হা
রবিবারের সকাল। রাজেন ঘুম থেকে উঠে দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো। ন’টা চল্লিশ।
কপাল থেকে মাথার মাঝ বরাবর হাত বোলাতে গিয়ে অনুভব করল মাথার মাঝখানটায় চুল নেই।
শূন্য মাঠ। হবেই বা না কেনো? ক্লার্ক থেকে সুপারিন্টেন্ডেন্ট হওয়া পর্যন্ত বয়সটা
কী একই থাকবে? সীমার রেখে যাওয়া লেবু চা-এ
কয়েকটা চুমুক দিয়ে বারান্দায় গেলো। সিগারেট জ্বালিয়ে ঝপাস্ করে ইজি চেয়ারে বসে
পড়ল। বসার সাথে সাথে মেদের স্তরে যেন ভূমিকম্প হলো, তা স্তিমিত হতে সময়ও নিলো একটু।
ক্লান্তির শ্বাস ফেলল। উম্, এখনো গন্ধটা আছে। যতই হোক, মিলিটারিদের ব্রান্ড।
তাছাড়া কাল রাতের পরিমাণটা একটু বেশিই হয়ে গিয়েছিল। প্রথম দিকে সীমাকে লুকানোর
জন্য এক পেগ হুইস্কি খাবার পরও পান-তামাক খেয়ে মুখের গন্ধ চাপা দিতে হতো। আর এখন
শোয়ার ঘরের টেবিলে সারা রাত স্বয়ং বোতল জাগ্রত শুয়ে থাকেন। অনেক দিন হল সীমা অনাপত্তির
শংসাপত্র দিয়ে দিয়েছে। সেও ইদানিং অন্যরকম জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়েছে।
সিগারেটে জোর টান দিয়ে রঞ্জন সামনের দিকে তাকালো। সূর্যের
তাপ বেড়ে উঠেছে। সামনের হ্রদটার জল ঝল্মলিয়ে উঠ্ছে। যেন নাইট ক্লাবের নর্তকীর
চুমকিদার ঘোমটা। রুক্মিণী নদীর গতিপথ পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতই ঘোমটার মতো বাঁকা এই হ্রদ
সৃষ্টি হয়েছে। দুই মুখ বন্ধ থাকার জন্য সারা বছরই এতে জল থাকে, কিন্তু স্রোতহীন। এমনকি বর্ষা কালেও নিঃসোঁতা। আসলে একটা মরা নদী।
মরা নদীর জল উপর থেকে কাচের মতো দেখতে লাগে কিন্তু এক-দেড় ফুট নীচে রয়েছে অকল্পনীয় শেওলা-ঝাঁঝির সাম্রাজ্য।
লেকের দু’ধারেই কিছু কোয়াটার্স, অফিস আর দোকান মিলে-মিশে
আছে। এখানকার ইতিহাসটা তেমন পুরাতন নয়। কয়েক বছর আগেও ছিল সাধারণ একটা গ্রাম। কয়েকটা
সরকারি অফিস, কারখানা তৈরি হওয়ার পর এলাকাটায় শহুরে ছোঁয়া লেগেছে। তবে এখনো এর
শরীর থেকে গ্রামের লক্ষণ উধাও হয়ে যায়নি। যেমন ওই দৃশ্যটি; কিছুদূরে শিমুল গাছের
ছায়ায় ছিপ ফেলে বসে থাকা একটি লোক। মোষের মতো কালো গায়ের রং, ড্যাঙা গড়ন, মজবুত
হাত-পা। ছিপের সঙ্গে আটকানো টোপ। দেশীয় পচই-এর অব্যর্থ টোপ। রাজেন প্রায়শই এই লোকটকে দেখে। সে বিস্মিত
হয়ে ভাবে এত বড়ো বড়ো মাছ এই লোকটা কী করে ধরে! আরও একটি যুবক আজ লোকটির পাশে বসে কথা বলছিল। সম্ভবত
ছোকরাটি ইদানীং বদলি হয়ে এসেছে। সিগারেটে সুখটান দিতে দিতে রাজেন তাদের কথপোকথন
শুনছিল –
‘চার দেখছি না,
মাছ কি এবার উঠবে?’
‘হ্যাঁ, উঠবে। তবে বড়ো মাছগুলো খাবার খেয়ে গভীরে চলে যায়, আর
নীচে এত ঘন শ্যাওলা যে মানুষের পড়লেও তার লাশও খুঁজে বার করা শক্ত। ওরা একেক সময়
অল্প সময়ের জন্য শ্যওলা সরিয়ে উপরে ভেসে ওঠে। যখন স্রোত ছিল...’
‘স্রোত! কী বলছো...’
২।
‘এখন, আসলে এটা একটা মরা নদী।
এক সময় রুক্মিণী এই পথেই প্রবাহিত হতো। যখন নদীর মুখ ছোটো হয়ে যেতে থাকলো তখন কিছু
সরকারি কর্মচারী ও দুর্বৃত্ত মিলে সেখানটা বেঁধে দিল, আর নদীপথ গেল অন্য দিকে বেঁকে।
‘ও, তাই বল। তাহলে সেটা বেশি দিনের কথা নয়’
‘না, না, পঞ্চাশ
বছরও নয়। রূপোলি মাছেরা কাচের মতো জলে তখন
নেচে বেড়াতো। শ্যাওলার বালাই ছিলো না তখন।’
‘সংস্কার এখনও করা যায়’
‘সংস্কার! ছিপ
ওয়ালা তার আয়ত চোখে বিস্ময় নিয়ে যুবকের দিকে দেখে।’
‘করো সংস্কার। তুমি ও তোমার মতো যুবকেরাই এ কাজের যুগ্যি,
এগিয়ে এসো, এই পথেই আবার রুক্মিণীর স্রোতকে বইয়ে দাও।’
‘ঠিক’। ছাইদানিতে সিগারেটের ছাই ঝেড়ে রাজেন বলে উঠলো ‘যুব
শক্তি, এগিয়ে যাও’
‘ঠিক’ পুনর্বার উচ্চারণ করলো রাজেন, যেভাবে পঁচিশ বছর আগে
ছাত্র নেতা রাজেন বক্তৃতা দিত। শব্দের যথার্থ অর্থ যেন পরিস্ফুট হল - ছিপ
ওয়ালা দার্শনিকের মতো কথায়।
ভূতপূর্ব ছাত্র নেতা, রাজেন মনে মনে বক্তৃতা শুরু করে –
শ্যওলা সাফ করো, সমস্ত রকম শ্যাওলা। হ্রদ, নালা যেখানেরই হোক না কেন, এমনকি আমাদের ঘরের চারিদিকে যেসব শ্যওলা বেড়ার
গায়ে লতিয়ে আছে সেসবও। মুক্ত করো আবর্জনা।
ভ্রূ থেকে চোখের সামনে ঝুলে থাকা সূতোর মতো মূর্তিমান অস্বস্তি...
উত্তেজনায় সিগারেটটা মুচড়ে অ্যাসট্রেতে ফেলে দিলো রাজেন।
‘কি গো, শুনছো?
ওঠো, উঠে মুখ হাত ধোও। দশ’টা বাজে’ বলতে
বলতে সীমা বারান্দায় এলো।
‘উম্...’ রাজেন ইজি চেয়ারে বসেই থাকে। একটু থেমে সীমা
বলে, ‘আজ একটা ছুটির দিন, ছেলেটাকে একটু পড়াতে তো পারো। পরোপুরি...
’
‘কেন, এখন ওর টিউশনির স্যার কি আসছে না?’
‘টিউশানির কথা ছাড়ো, তুমি পড়া দেখে দিলে পিকু সবচেয়ে খুশি
হয়।’
‘সত্যি ?’ রাজেন সোজা হয়ে বসে। ব’সে তার দশ বছরের ছেলে পিকুকে দেখতে পায়, একটা বই নিয়ে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে।
পিকু ফাইভে পড়ে। আপরাজিতা ফুলের মতো তার চোখ। অত্যন্ত মেধাবী সে। পড়াশুনার প্রতি
ওর স্বাভাবিক একটা টান আছে।
৩।
ঠিক ঠাক সহায়তা পেলে একদিন ও
নিশ্চয়ই কিছু একটা হবে। কিন্তু সবসময় বাবাকে তো সে পায় না। আসলে রাজেন ওকে কাছে
ঘেঁষতে দেয় না। সে ভাবে নিষ্পাপ দেবদূত যদি তার চরিত্রে বদ্ হাওয়ায় মলিন হয়ে যায়।
সীমা ভাবে, মাতালের আবার সন্তান প্রীতি ‘... মূর্খ...’ স্মিত হাসে; রাজেন ইঙ্গিতে
ছেলেকে কাছে আসতে বলে। পিকু দৌড়ে এসে তার কোলে চাপে।
“দাও তোমার
অঙ্কগুলো দেখে দিই”
“এটা নীতিমালা, অঙ্ক নয়”
“নীতিমালা? তার মানে উপদেশ... যা!”
রাজেন মুখ সুচলো করে, নাক কুঁচকে সীমার দিকে তাকায়। তারপর
পিকুর মাথায় গাল ঠেকিয়ে ওর চুলের ঘ্রাণ নেয়।
“পিকু তুমি এখন যাও। তোমার মা তোমাকে সব বুঝিয়ে দেবেখন”
“মোটেই না, আমি এসব পারি না। ” সীমা মুখ ফিরিয়ে নেয়।
“কেন? গ্রাজুয়েশনে তো তোমার শিক্ষাবিজ্ঞান একটা বিষয়ই ছিল।
তুমি এই চাকরিতে ঢোকার আগে একটা স্কুলেওতো পড়িয়েছ। হয়তো অচর্চায় ভুলে গেছো, একটু
চেষ্টা করলেই... ”
সীমার তীব্র চাহনিতেই রাজনের কথা মাঝপথে থেমে গেল।
“ঠিক আছে পিকু, চিন্তা নেই...” রাজেন তোতলায়, “তোমার জন্য
আমি আর একজন মাস্টার মশাই কালকেই এনে দেব। তিনি তোমাকে সাহিত্য, নীতিমালার মতো
বিষয়গুলো দেখিয়ে দেবেন। এখন তুমি যাও।” বই নিয়ে বিষণ্ণ মুখে পিকু ঘরে ঢুকে যায়।
তৎক্ষণাৎ সীমার উপরে খিঁচিয়ে ওঠে রাজেন; “ তুমি কি পাগল হয়েছ? আমি নীতিশাস্ত্র
পড়াব? তুমি কি ছেলের কাছে আমাকে বেহায়াপানা করতে বল?”
“তুমি পারো না কেন? তুমিওতো গ্রাজুয়েট”
“তা অবশ্য ঠিক”
“তুমি বোঝবার চেষ্টা কর সীমা, কোন্ নৈতিকতা আর অবশিষ্ট
আছে পিকুর বাবার জীবনে, যে ঘুষখোর, মাতাল, চরিত্রহীন তার কি নীতিশাস্ত্র পড়ানোর
কোনও অধিকার আছে? পঁচিশ বছর ঘুষ নিচ্ছি
সরকারি ফাইলে শুধুমাত্র হাত দেবার জন্য, আফিসে আসা যাওয়ার পথে কম পক্ষে এক’শটা
মিথ্যে বলি, এর পরেও সেই বাবা কি করে তার ছেলেকে উপদেশ দেবে মিথ্যে না বলার জন্য। এরকম
অবিচার করো না। এটার মতো বড়ো পাপ আর কিছু হয় না, মহাত্মা গান্ধী, বিবেকানন্দ ... ”
“থামো, যথেষ্ট হয়েছে, চিৎকার করো না, বাণী না দিয়ে সহজ
কথাটা সোজা করে বললেই তো হয়।”
“পারতাম, আমি পারতাম সীমা, পঁচিশ বছর আগে।”
“আমি জানি তুমি কেন পারো না।”
৪।
“আমি জানি একজন মানুষ অন্যকে হাজারো মিথ্যা বলতে পারে কিন্তু নিজের কাছে
কাছে সে মিথ্যুক হতে চায় না।
একদা আদর্শবাদী ছাত্রনেতা অত্যন্ত হতাশায় ডুবে যায়। এক
মুহূর্ত চুপ থেকে আবার সে বলতে শুরু করে, “আমার লজ্জা করবে না যখন নীতি-আদর্শের
গল্প শুনিয়ে আমি তাকে সুন্দর জীবন গড়ার কথা বলব, আর হাসিমুখে সে তা বিশ্বাস করবে। আর
যাই হোক, ছেলেকে অসম্মান আমি করতে পারবো না।’
‘আমিও তাই’ সীমা উচ্চারণ করে।
‘তাহলে আমাকে আর পড়াতে বোলো না ওকে, আমি প্রয়োজনে আরও প্রাইভেট টিউটর দিয়ে দেব’
বলেই স্থূল দেহ নিয়ে স্নানঘরে
ঢুকে গেল।
নির্জন স্নানঘরে অতীতের হাজারো স্মৃতি রাজেনের মনে ভিড়
করে। একাকীত্বের নির্জনতাইতো স্মৃতির স্থায়ী ঠিকানা, প্রকৃত ঘর। ব্রাশ করতে করতে
নিজের ছবির দিকে তাকায় আর ভাবে – সে
কী ছিল আর কী হয়েছে। কৃত্রিমতার মুখোশ
পরার মর্মযন্ত্রণায় পুড়ে যাচ্ছে সে। গ্রামের বাল্যস্মৃতি উঁকি মারে তার মনে। সে রোমন্থন করে মাঠে মাঠে শুকনো গোবর কুড়নো,
রাস্তায় রাস্তায় লাফিয়ে বেড়ানো ও বাউন্ডুলেপনা। জীবন্ত হয়ে ওঠে বগলে স্লেট নিয়ে
পদ্মবীজ চিবোতে চিবোতে স্কুলে যাওয়া। ভালো ছেলে হওয়ার জন্য সকলের কাছে সে আদর
পেতো। কলেজ জীবনের কথাও তার মনে আসে। ছাত্র-সংগঠন, আন্দোলন, পরীক্ষা বয়কট,
রাস্তারোকো। সীমার সঙ্গে প্রথম পরিচয়,
উদ্দাম ভালোবাসা, তাড়াতাড়ি বিয়ের জন্য পাগলামো – সব কিছু কেমন ছবির মতো স্পষ্ট ভাসে
চোখের সামনে। বিয়ের আগে পর্যন্ত সব প্রায় ঠিক ঠাক ছিল। একটা মহান আদর্শ তার চোখে ভেসে বেড়াতো। বিয়েতো হল, কিন্তু চাকরি! চাকরির সন্ধানই তাকে
দুর্নীতির অন্ধকার পথে টানলো। সমস্ত আদর্শ খান্ খান্ হয়ে ভেঙে পড়ল। চাকরি পাবার
জন্য তাকে তার জমি বিক্রি করে দিতে হল। টাকা সর্বস্ব হয়ে গেল সব। দেদার ব্যয় করতে
থাকল সাংসারিক দারিদ্র্যের অজুহাতে। ছেলে মেয়ে হল। গ্রামের খোড়চালা বাড়ি পাকা হল।
জমি-জমা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকলো। টিভি এল, ফ্রিজ এল, গাড়ি এল এবং রাজেনের
প্রমোশন ও সীমার চাকরি। ভোগ্য পণ্য যতই প্রবেশ করতে থাকলো সংসারে ততই শুকিয়ে যেতে
থাকলো আনন্দ। ইনকাম ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার জন্য জীবনযাপনের অসুখ ডেকে আনলো অথচ লোকে
জানলো তারা কতই না ধনী। সীমার হল মেলিনা
আর রাজেনের হার্টের সমস্যা ধরা পড়ল। এমন কি তাদের সন্তানরাও তাদের স্বস্তি দিল না। বাবার টাকা দেদার নষ্ট করতে থাকলো বাইক চালিয়ে,
মোবাইল ফোনে কথা বলে। অথচ বাবার পরিচয়
দিতে তারা লজ্জা পায়। লোকে তাদের বাবার
ডিপার্টমেন্টের কথা শুনে হাসলে তাদের আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগে। বড়ো ছেলেটার মেধাবী ছিল কিন্তু পুরপুরিই
অধঃপাতে গেল। মদ গাঁজা ড্রাগে আসক্ত। সে তো রাজেনকে বাবা বলেই মান্যই করেই না।
মেয়েটার তার নাম ডোবায় একটার পর একটা লজ্জাজনক ঘটনা ঘটিয়ে। তাকে গ্রামের বাড়িতে
পাঠিয়ে একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে চেয়েছিল। তা ও হল না। সেখানেও মেয়ে নিজেকে
শোধরাতে পারলো না। রাজেন যখনই দেশের বাড়ি যায় তখনই দরাজ হাতে এক-দু’হাজার টাকা
সাহিত্যসভা, জনসভা, ক্লাব, পূজা, বিহু, ঈদ প্রভৃতি উপলক্ষ্যে দান ক’রে একটা
পদমর্যাদা আদায় করে। সুতরাং তার বিরুদ্ধে আর চট্ করে কেউ কিছু বলতে
পারে না। যদি তার পরিবর্তে অন্য কেউ হতো তা হলে ব্যাপারগুলোর প্রতিক্রিয়া অন্যরকম
হতো। এই দেদার পয়সা খরচ তার সম্পর্কে অন্তহীন দুর্নামের সমাপ্তি টানার একটা কৌশল। সমাজের সঙ্গে একটা দহরম মহরম না রাখলে
ছেলেমেয়ের বিয়ে দেবে কী করে! এছাড়াও
অবসরের পরে তো একটা সামাজিক মঞ্চ চাই। অবসরের আর বেশি দিন বাকিও নেই। তাছাড়া বড়ো
ছেলে এই বয়সে যেমন মেধাবি ছিল, ছোটো পিকুও সেরকম। ওর বড়ো হয়ে উচ্ছিন্ন যাওয়াটা তার
কাছে অকল্পনীয়। কী সময়! বাবা ছেলেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পরে না! যদি সে প্রশ্ন তোলে, তখন? ভয়ের যথেষ্ট কারণ
আছে। প্রজন্মটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে।
দুর্নীতির জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসার কোনও সম্ভাবনা আছে? কোনও অতিমানব কী আছে যা এই সব
ঝেঁটিয়ে বিদেয় করবে? না, সেরকম কেউ নেই। সবই দূষিত। দুর্নীতি বহুমুখী হাইড্রার মতো ক্ষুদ্রতম
সামাজিক বিষয়ের মধ্যেও প্রবেশ করেছে। নিশ্বাস নেবার মতো কোনও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ
নেই। ও! কী ছিল আগের জীবন !
দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে রাজেন স্নানঘর থেকে বেরিয়ে এলো। খাবার
টেবিলের পাশে বসে সীমার বানানো চায়ে চুমুক দিলো। মনের তিক্ততায় চা-ও তিতো হয়ে গেল।
‘পিকু কই?’
‘একটু আগেইতো মুখগোমড়া করে বারান্দায় বসে ছিল’
‘পিকু, পিকু ।’ সীমা বারান্দায় বেরিয়ে এল।
‘কোথায় আর যাবে? এখানেই তো ছিল’
‘ কোথায়? লেকের দিকে যায়নিতো? যদি জলে পড়ে যায়! একটু
খেয়ালও রাখো না বাচ্চাটার।’ চায়ের কাপটা
সরিয়ে বারান্দা পার হয়ে সীমার সঙ্গে উঠোনে নেমে এল উদ্বিগ্ন রাজেন।
‘ ও মা –মা
– ও বাবা...’ লেকের
দিক থেকে পিকুর স্বর ভেসে এল। ‘শীঘ্রি এস, দ্যাখো’
‘কী হয়েছে? কী?’ সীমা দৌড়ে গেল ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়নো রাজেনের
পেছনে পেছনে।
‘ওখানে দ্যাখো, এত্তো বড়ো একটা মাছ বেরিয়েছে। ও-য়া-ও!’আনন্দে
পিকু হাততালি দিয়ে লাফাতে লাগলো। চকিতে সেদিকে তাকিয়ে রাজেন ও সীমা দেখল সত্যি
মাছটা জলের উপরের দিকে শ্বাস নেওয়ার জন্য উঠে এসেছে। ছিন্ন শ্যাওলা এখনো তার লেজে লেগে আছে। রূপোলি
শরীরে কালোর ছিটে।
‘ভালো, শেষ পর্যন্ত তাহলে বেরিয়ে আসতে পারলো। শেষ পর্যন্ত এত শ্যাওলার
বাঁধন সরাতে পারল।’ রাজেন বিড় বিড় করে উচ্চারণ করে। মাছ শিকারি তার অব্যর্থ চার
মাছের মুখের সামনে সরিয়ে নিয়ে যায়। মাছটি
যেন তা দেখতেই পাচ্ছে না। কখনো কাত হয় কখনো সোজা কখনো বা চক্রাকারে ঘুরতে থাকে।
শ্যাওলার বন্ধন থেকে মুক্তি পেয়ে তার আনন্দের সীমা নেই।
৫।
মাছটির লেজের ঝাপটে হঠাৎ মরা
নদীতে সাময়িক স্রোত তৈরি হ’ল এবং বৃত্তাকারে সে পাক খেতে খেতে দূরে চলে গেল
‘বা!’ ক্ষণিকের হলেও সেই স্রোত দেখে দারুণ উত্তেজিত রাজেন
পিকুকে বলে –‘চল্ পিকু, তুই
আমাকে পড়াতে বলছিলি না? চল্।’
*ইংরেজি
অনুবাদক সুভজিৎ ভদ্র।
Comments
Post a Comment